Tuesday, July 29, 2014

গেঁয়োর বিদেশ যাত্রা !!!

ছোটবেলায় একটা কবিতা পড়েছিলাম

"খুড়োর ছিল উড়োজাহাজ, কল ছিল তার ভাঙ্গা
সেই জাহাজে চলল খুড়ো শূন্যে পারুলডাঙ্গা।
মাঝ আকাশে গোঁত্তা খেলে
 পড়ল খুড়ো নদীর জলে
লজ্জা এবং অপমানে মুখটি হল রাঙ্গা
নদীর জলে সাঁতরে খুড়োর মনটি হল চাঙ্গা।"

কবিতাটা আমার বেশ প্রিয় ছিল। আজও আছে অবশ্য। বেশ একটা হালকা হাসির কবিতা। তবে আমার বেশ সন্দেহ হয় যে এই কবিতাটা লিখেছিল সে জীবনে কখনও উড়োজাহাজে চড়েছে কিনা। ভাবো কোথাও কিছু নেই খুড়ো উড়োজাহাজ নিয়ে চললেন পারুলডাঙ্গা। এ যেন সাইকেল নিয়ে বাজার যাওয়া। এই উড়োজাহাজ এর কবিতাটা আরও হাসি লাগে যখন থেকে উড়োজাহাজে চড়েছি। 
 
   সে এক ঘটনা। 
 
বেশ ছিলাম। হঠাৎ একদিন খবর এল বিদেশ যেতে হবে। শুনেই তো মনটা নেচে উঠল। বিদেশ যাওয়া মানেই উড়োজাহাজে চড়া। যতই কর বাবা, আর সড়কপথে নয়। এবার উড়োজাহাজেই যেতে হবে। বিদেশ যাওয়ার যা না আনন্দ ছিল তার থেকে অনেক বেশি আনন্দ ছিল প্লেন এ চড়ার সুযোগ পাওয়ায়। কি আনন্দ, কি আনন্দ। আসল ওড়ার আগেই হাওয়ায় উড়ছি যেন। 
  যাই হোক। বিদেশ যেতে গেলে অনেক কাজ থাকে, ব্যাগ গোছানো ছাড়াও। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ভিসা করানো। আশেপাশে কোথাও ভিসা করানো যায় না। অগত্যা দিল্লি চল। বেশ ফুর্তি ফুর্তিতে ট্রেনে চড়ে বসলাম। ব্যাস দেখতে দেখতে দিল্লি পৌঁছে গেলাম। এক কলেজতুতো দাদার কাছে থাকার ব্যাবস্থা করে ফেলেছিলাম। তাই থাকা খাওয়ার কোন চিন্তা ছিল না। 
 
  ট্রেন এ একটা মজার ঘটনা হল। এক বাঙ্গালী লোকের সাথে পরিচয় হল। কথায় কথায় জানা গেল সে কোন এক সাধুর ভক্ত যে কিনা আমাদের পারিবারিক গুরুর পরিচিত। আহা কি কাছের সম্পর্ক ! এসব ক্ষেত্রে সেন্টিমেন্ট আমার জানা। লোকজন হঠাৎই কেমন নিজেকে অনেক কাছের মনে করে। আমিও ঝুলে পড়লাম তার সাথে। মানে এক বেলার জন্য। সে বলল সে নাকি এখন সেই সাধুর আশ্রমেই যাচ্ছে। সেখানে নাকি থাকা খাওয়া ফ্রি। ফ্রির জিনিস কে না ছাড়ে। গেলাম তার সাথে। আমাকে তার গুরুর সাথে এমন ভাবে পরিচয় করিয়ে দিল যেন আমি তার কতদিনের পরিচিত। তবে হ্যাঁ গুরু যে খুব কেয়ার করলেন তা মনে হল না। আশ্রমে এমনিতেই লঙ্গর চলছিল। একজন তাতে যোগ দিলে কারো কিছু এসে যাবে বলে মনে হল না। সাধুদের খাবার বলে কথা। বিশুদ্ধ ঘিএর তৈরি। ট্রেনযাত্রার ধকল আর খিদে ছিল  যথেষ্ট পরিমানে। যখন উঠলাম তখন পেট এতটাই ভরে গেছে যে উঠতে পারছি না। বললাম এই আশ্রমে একটু বিশ্রাম নেওয়া যায় না? লোকটা বলল কেন নয়? চল একটা ঘর দিচ্ছি শুয়ে পড়। আহা হাতে যেন চাঁদ পেলাম। একদম নাক ডাকিয়ে ঘুম দিলাম।
 
ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে পৌছালাম দাদার কাছে। কাজ বলতে ভিসা করান আর ফ্লাইট টিকিট কাটা। মোট পাঁচ দিন লাগবে।
  পরদিন সকালে গেলাম কোরিয়ান এমবাসিতে। দিল্লির এই চাণক্যপুরি এলাকাটা খুবই সুন্দর। একদম শান্ত ছিমছাম। গাছ গাছালিতে ভর্তি। মনেই হয় না দিল্লির মত বড় শহরে আছি। লোকজন কম। আর বিভিন্ন দেশের বিদেশ দফতর। প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব স্থাপত্যের ঐতিহ্য অনুসারে ঘরগুলো বানিয়েছে। একটু ঘরাঘুরি করলে মনে হয় পুরো দুনিয়াটা হৃদয়ে অনুভব করলাম।
  কোরিয়ান এমবাসিতে দাঁড়িয়ে আছি। একজন এজেন্ট ফোনে কথা বলছে। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি। হিন্দিতে একটা হরিয়ানার টান। বড় মধুর লাগে। আর একজন এজেন্টের সাথে কথা বলছে।
"হ্যালো, কাঁহা হ্যাঁ তু?"
"............"
"ম্যা কোরিয়া মে হু, থড়ী দের রুখ, আমেরিকা হোকে আধা ঘন্টে মে ফ্রান্স পউছ রাহা হু"

আহা। দুনিয়াটাকে হাতের মুঠোয় এরাই রাখে ! কথায় কথায় জানা গেল সে বিমান টিকিটও বিক্রি করে। সে তার কার্ড দিল। বলল ভিসা হলে বোলো, তোমার টিকিট করিয়ে দেব।

 সারা দিন দিল্লিতে গলি গলি ঘুরলাম। সাথে একটা ম্যাপ ছিল। কোন অসুবিধা নেই। রাতে ফিরে এলাম দাদার ঘরে। ওরা তিনজন থাকে একসাথে একটা ঘর ভাড়া করে। একজন ছিল যে বিমানবন্দরে কাজ করে। আমি যেন হাতে চাঁদ পেলাম। কখন বিমানবন্দর দেখি নি। ঠিক হল কাল যাব ওর সাথে এয়ারপোর্ট দেখতে। বেশ উত্তেজনায় কাটল রাতটা।
 
   পরদিন গেলাম এয়ারপোর্টে। আমার স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকে কত শুনেছি প্নেন আর এয়ারপোর্টের ব্যাপারে। সত্যি এ এক রাজসুয় জজ্ঞ। কি বিশাল। সবাই কি কেতাদুরস্ত। নিজেকে একবার দেখলাম। সবার তুলনায় একটু গ্রামিন গ্রামিন লাগছে। নিজের কনফিডেন্স লেভেলটা একটু বাড়িয়ে নিলাম। (এমন অবস্থায় এ ছাড়া আর কিছু করার নেই)। সুন্দরী সুন্দরী বিমানসেবিকারা যাচ্ছে। যাচ্ছে তো নয় যেন প্রজাপতির মত উড়ছে। যাই হোক মনে মনে একটু শক্তি আনলাম। আর যাই হোক না কেন আমিও কদিন বাদে এদের মতই প্লেনে চাপব।
 
  দাদা একটু আধটু বুঝিয়ে দিল। কোথা থেকে টিকিট পাওয়া যায়, কোথা কি কি আছে। আমি তো অবাক চোখে দেখছি। কি চকচকে চারিদিক। মনে হল সত্তি "ভারত আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে"। এর আগে কয়েকবার প্লেন ওঠানামা দেখেছি, তবে দূর থেকে। একবার হায়দ্রাবাদে এয়ারপোর্টের পাঁচিলের উপর উঠে,  আর একবার চেন্নাইএ। দূর থেকে তো দারুন লেগেছিল। কিন্তু এবার এয়ারপোর্ট দেখে সত্তি মোহিত হয়ে গেলাম।
 
  কিছুক্ষণ পর আমার ঘোর কাটল। দাদার ভেতরে ডিউটি ছিল। ও ভেতরে চলে গেল। আমি ভাবছি কি করা যায়। আসলে শুধু বসে থাকতেই দারুন লাগছিল। বেশ নূতন নূতন জিনিস। ট্রলিতে মাল বোঝাই করে সব বের হয়ে আসছে। আর যারা রিসিভ করতে এসেছে তারা কি আনন্দে ফেটে পড়ছে প্রিয়জনকে দেখে। ঠিক যেমন সিনেমাতে দেখায়। একদিকে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র। ডলার, পাউন্ড, ইয়েন সব চিহ্ন।
ভাবলাম কাজের কাজ একটা কিছু করে ফেলি। আমাকে টিকিট তো কাটতেই হবে। এখনই কেটে নিলে কেমন হয়? সারি সারি সব এয়ারলাইন্সের কাউন্টার। সেখানে সুন্দরী সুন্দরী তরুণীরা টিকিট বিক্রি করছে। এই তো সুযোগ। অন্তত ওদের সাথে কোথা বলার তো একটা সুযোগ পাওয়া যাবে।
 
  একটু ভয় ভয় করছিল। ওদের সাথে স্মার্টলি কথা বলতে হবে। শুনেছিলাম স্পাইসজেট সস্তায় টিকিট দ্যায়। গেলাম ওদের কাউন্টারে। "ক্যান আই হ্যাভ এ টিকিট প্লিজ?" এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম।
প্রশ্ন এল "কোথায় যাবেন?"
"সিওল"
"কোথায়?!!!"
"সিওল"
"স্যার, আই কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড, হোয়ের ডু ইউ ওআনা গো?"
"সিওল, ক্যাপিটাল অফ কোরিয়া"
মাতাজী যেন আকাশ থেকে পড়লেন। জীবনে প্রথমবার এরকম প্রশ্ন শুনলেন যেন। হয়ত ভাবছিল কোন গ্রাম থেকে উঠে এসেছে রে বাবা? অথবা,  গুলিয়ে ফেলছিল যে, যে সিওলের সিওলের টিকিট চাইছে সে আর যাই হোক গ্রামের হতে পারে না।
"স্যার অ্যাকচুয়েলি দিস ইস ফর ডোমেস্টিক ফ্লাইট"
হাঃ হাঃ...। বেশ মজা পেলাম। বুঝে গেলাম এখানে কোন কাউন্টারেই সিওল এর টিকিট পাওয়া যাবে না। তাই জেনে বুঝে সবাইকে বিরক্ত করতে লাগলাম। আর সবার অভিব্যাক্তি দেখতে লাগলাম। বেচারা আমাকে গালিও দিতে পারছে না আর সইতেও পারছে না।
   ধীরে ধীরে আমি প্রশ্ন বাড়াতে লাগলাম। আপনার কাছে পাওয়া যাবে না তো কোথায় পাওয়া যাবে? ইত্যাদি। টাইম পাস দারুন হচ্ছিল। বিনা পয়সায়।
  সব কাউন্টার যখন শেষ হল তখন বাইরে এলাম। বাইরে তখন ঝিম ঝিম বৃষ্টি হচ্ছিল। দিল্লিতে দুটো বিমানবন্দর ছিল। একটা ডোমেস্টিক আর একটা ইন্টারন্যাসানাল। এখন মনে হয় একটাই হয়ে গেছে। আমি ছিলাম ডোমেস্টিক টারমিনালে। ভাবলাম ইন্টারন্যাসানালটাও দেখে আসি।
 মুস্কিল হল এই দুটো এয়ারপোর্ট এর মধ্যে কোন বাস বা ট্রেন নেই। ট্যাক্সিই ভরসা। হাতে বেশি টাকা নেই। তাই টাক্সির চিন্তা ছেড়ে দিলাম। তখন ঝিম ঝিম বৃষ্টি পড়ছে। কি করি কি করি? দেখি একটা বাস যাচ্ছে ইন্টারন্যাসানাল টারমিনালে। কিন্তু সমস্যা হল সেটা সাধারন যাত্রীদের জন্য নয়। যারা ডোমেস্টিক ফ্লাইট থেকে নেমে ইন্টারন্যাসানাল এ যাবে তাদের জন্য। এখন দুটো রাস্তা আছে আমার কাছে। এক,  এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কোথাও গিয়ে বাস ধরে ঘর অথবা এই বাসে কোন রকমে ম্যানেজ করে চড়ে যাও। ভাবলাম দেখাই যাক না চেষ্টা করে। বেশি হলে কি হবে? নামিয়ে দেবে। আমাকে কে আর চেনে এই দিল্লীতে। যেমন ভাবা সে রকম কাজ। চড়ে বসলাম। বেশিরভাগ যাত্রীই বিদেশী। সবার সামনে নামিয়ে দিলে কি অপমানটাই না হবে। একটা ফন্দি আঁটলাম। কন্ডাক্টার এলে বলব জানতাম না। তাই চড়ে বসেছি। আর একবার নিজেকে দেখলাম। অতটা খারাপ দেখতে নই। মানে বললে বিশ্বাস করবে মনে হয়। প্রতিটা মিনিট অনেক লম্বা লাগছে। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম। আসলে বাসটা ফ্রি সারভিস। আহা কি মজা।
 ইন্টারন্যাসানাল টারমিনাল দেখে তো আমার চক্ষু ছানা বড়া। বাপরে কি বিশাল। এই এয়ারপোর্টটা আরও ফাঁকা ফাঁকা। বাস একদম দুতলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বাপরে। এতো বড় এতো বড় যে পায়ে হেঁটে শেষই করা যায় না। আমি তো চারিদিকে ঘুরতে লাগলাম।  
 আগে চলন্ত সিঁড়ি দেখেছিলাম। কিন্তু এখানে দেখলাম চলন্ত বেল্ট। কি মজা। করিডর এ হাটতে হবে না, চলমান ফিতায় চড়ে যাও এগিয়ে যাবে। তাও আবার ফ্রি। এই ফ্রির জিনিস আমাদের খুব টানে। আমি তো বার বার চড়লাম। এখানে আবার অনেক বিদেশী লোক।
  আবার সেই টিকিট এর কথা মাথায় এল। ভাবলাম এটা তো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হয়ত এখানে সিওল এর টিকিট পাব। আর যদি নাই পাই, মজা তো হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। অনেক কাউন্টার ঘুরলাম। অবশেষে এয়ার ইন্ডিয়ার কাউন্টার এ গেলাম।
  ওরা একটা মজার কথা বলল। বিমানেও নাকি ছাত্রদের জন্য ছাড় আছে। আমি বাসে ট্রেনে স্টুডেন্ট ডিস্কাউন্ট এর কথা শুনেছিলাম, কিন্তু তা বলে একেবারে বিমান টিকিট এ ছাড়? বলল সফদরজং বিমানবন্দর এ নাকি এয়ার ইন্ডিয়া র অফিস আছে। সেখান থেকে পাওয়া যাবে।
  ব্যস আর কি ? মিশন সফদরজং। হাতে একটা ম্যাপ ছিল। খুঁজে খুঁজে চলে গেলাম। সফদরজং এ গিয়ে একজন কে জিজ্ঞাসা করলাম "দাদা এখানে বিমানবন্দরটা কোথায় বলতে পারবেন?" সে আমার মুখের দিকে কেমন যেন উদাস ভাবে তাকাল। বলল এখানে কোন বিমানবন্দর নেই।
আমিও ছাড়ার পাত্র নই। একদম সোজা ম্যাপ খুলে দেখিয়ে দিলাম। সে তো হতবাক। হাতের কাছে একটা আস্ত বিমানবন্দর আছে আর সে দিল্লির লোক হয়ে জানে না?
 আসলে হয়েছে কি, সফদরজং এ সত্যি একটা বিমানবন্দর ছিল। কিন্তু এখন আর সেটা ব্যবহার হয় না। সে তো আর আমি জানি না, আর সেও জানে না।
  যাই হোক। অবশেষে পৌঁছান গেল এয়ার ইন্ডিয়া র অফিসে। কিন্তু দুঃখের কথা কোরিয়া র জন্য কোন ছাড় নেই। বড় দুঃখ পেলাম।
  ফিরে এলাম ঘরে। দিন চার এর মধ্যে ভিসা পেয়ে গেলাম। এবার যাত্রা শুরু।

দিনটা মোটামুটি মনে আছে। ২৭এ সেপ্টেম্বর ২০১০। সকালে সূর্যটা আর পাঁচটা দিনের মতই উঠেছিল। কিন্তু আমার কাছে এক ব্যাতিক্রমি, এক অন্য সকাল। খুবই উত্তেজিত ছিলাম। কলকাতা বিমানবন্দরে যখন পৌছালাম তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আনন্দ করব না দুঃখ করব। একদিকে প্রথমবার বিদেশ ভ্রমন এর অভিজ্ঞতা আর অজানা ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আর এক দিকে বাবা মা কে ছেড়ে যেতে হবে। এক অদ্ভুত মিশ্র ঘোরের মধ্যে সময় কাটছিল। অবশেষে বাবা মাকে প্রনাম করে ঢুকলাম এয়ারপোর্ট এর ভেতর। আমার বোন সবসময় একটা অশ্রু সজল বিদায় জানায় আমাকে।

 একটা শিহরন হচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম না এটা বাস্তব না স্বপ্ন । ধীরে ধীরে গিয়ে ঢুকলাম প্লেন এর মধ্যে। অনেক দিনের অনেক প্রশ্নের সমাধান পেলাম। আগে ভাবতাম এত ছোট প্লেন (দূর থেকে প্লেন ছোটই লাগে) এর মধ্যে লোক ঢোকে কি করে? এখন বুঝলাম এটা ঠিক এতোটা ছোট নয়।
  ফ্লাইট যখন রানওয়ে ছাড়াল তখন আমার শরীর আর মন দুটোই আকাশে। সাথে আবার খাবার দাবার এর  আয়োজন। আহা বড় আরাম। কি খাতির। "হোয়াট উড ইউ লাইক  'স্যর' ?" শুনে তো নিজেকে বেস কেওকেটা লাগছিল। টাকা থাকলে যে এক দিনেই 'স্যার" হওয়া যায় সেটা দেখলাম। আর বেশ মজা নিলাম।
  প্লেনটা ধীরে ধীরে উপরে উঠছে, বাপরে !! মেঘগুলো তো আমার পাশে পাশে। ক্রমশ মেঘের দেশ ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে পড়লাম। স্বর্গ কি এখানেই কোথাও?

 দু ঘন্টায় দিল্লি। আহা রে। কি মজা কি মজা। বের হয়ে দেখি আরে এই তো সেই ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট। এখান থেকে ইন্টারন্যাসানাল এয়ারপোর্ট এ যেতে হবে। মানে আবার সেই ফ্রি বাস। একদিন এই বাসেই কি ভয়ে ভয়ে চড়েছিলাম। আজ একদম গর্বভরে গেলাম। মাথা উঁচু করে। টাকার কি ক্ষমতা।

সাথে কিছু মালপত্র ছিল। বাস এর হেল্পার কে বললাম "ভাইয়া সামান উঠাও"। এমন নয় যে আমি তুলতে পারতাম না। কিন্তু আজ অনেক দামি প্লেন এর টিকিট আছে আমার কাছে !!! টাকার গরম। নাকি পাগলের গোবধেই আনন্দ !!!

 যাই হোক, আবার বিমান যাত্রা। এবার সাড়ে ন ঘন্টা।

ছোট ফ্লাইট থেকে বড় ফ্লাইট। বাপরে কি বড়। যেন একটা আস্ত ঘর। একসময় সেও উড়ল।

 আমার মন তখন কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।