Thursday, December 12, 2013

ধান শীষ

হঠাৎ অনেক দিনের কথা মনে পড়ে গেল। সেটা কোন এক শীতের দিন। ধান কাটার দিন। আমার বয়স ছয় কি সাত। আমাদের একটা নুতন ট্রাক্টর কেনা হয়েছে। চাষ এর কাজে লাগে। লাঙ্গল দেওয়া, মাঠ থেকে ধান আনা। আমি তো খুশিতে উড়ছি। গরুর গাড়িতে চড়তে বেশ মজা। কিন্তু ট্র্যাক্টর আরও মজাদার। একজন ড্রাইভার রাখা হয়েছে। আমি তো সারাক্ষণ ড্রাইভার এর সাথে সাথে ঘুরি। 
আমি ড্রাইভার কে ড্রাইভারই বলতাম। এমন কি ড্রাইভারকাকুও নয়। শুধুই ড্রাইভার। ড্রাইভার ও আমাকে খুব ভালবাসত। যেখানেই যেত আমাকে নিয়ে যেত। মানে মাঠে ঘাটে আর কি।ট্রাক্টর নিয়ে আবার কোথায় যাবে। আমি সারাক্ষণ ড্রাইভার কে ক্ষেপিয়ে তুলতাম। আমাকে ট্রাক্টর চালান শেখাতে হবে। ড্রাইভার পড়ে মহা মুশকিলএ। কারণ ট্রাক্টর এর সিট এ বসলে আমার পা তখনো নিচে ব্রেক পর্যন্ত পৌছায় না। আমাকে মাঝে মাঝে স্টিয়ারিং এ বসিয়ে চালাত। ভারি মজা হত আমার।
ধান কাটার সময় সত্তি খুব মজার। সারা দিন ট্রাক্টর ব্যাস্ত থাকে মাঠ থেকে ধান আনতে। আর আমি সারাক্ষণ ট্রাক্টর এ। আর যখন জমি থেকে ধান ট্রাক্টর এ তোলা হচ্ছে আমি ধানের শিষ কুড়োতাম। ধান কাটার পর ধানের ডগার কিছু কিছু অংশ জমিতেই পড়ে থাকে। তাকে বলে ধানের শিষ। কেও সেই শিষ জমা করলে অনেক ধান পাওয়া যায় তার থেকে। কিন্তু ব্যস্ততার কারনে কেও সেটা সংগ্রহ করে না। আমার তো কাজ নেই। আমি ধানের শিষ কুড়তাম। আপন মনে।
আরও অনেক ছোট ছেলে জমা হত ধানের শিষ কুড়োবার জন্য। তারা একটু গরিব। সেই ধান সংগ্রহ করে ওরা দোকান এ বিক্রি করে চানাচুর কিনত। আমি ধানের শিষ কুড়িয়ে কিছুই করতাম না। সেটা আমার কাছে শুধুই মজা। সেই সব ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতা করতাম। কে বেশি শিষ কুড়তে পারে। হারতাম আমিই।
একসময় ট্রাক্টর এর ট্রলি ভরে যেত ধানে। ফিরে যাবার পালা। আমি ড্রাইভার এর কোলে। এমনি ভাবে সারাদিন ট্রাক্টর এ চেপে আর ধানের শিষ কুড়িয়ে কেটে যেত দিন। সন্ধ্যা বেলায় যখন লাল সূর্য ডুবছে পশ্চিম আকাশে আমি ক্লান্ত, অবসন্ন, সারা গায়ে ধুলোয় ভরা, ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করেছে।

মনটা বড় উদাস হয়ে গেল। এই ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে। বড় ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে সময়কে উলটো দিকে ঘুরিয়ে। অনেক দিন আগে লিখেছিলাম নিচের কবিতাটা। এখন খুব সত্যি মনে হচ্ছে