Thursday, November 14, 2019

পাতা ঝরার দিনগুলি

Autumn কে কি বসন্ত বলা যায়? আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতবর্ষে হেমন্তকালের যা রূপ আর ইংরেজিতে  Autumn এর রূপ এক নয়। তাই উত্তর গোলার্ধে হেমন্ত আর Autumn একসাথে আসলেও হয়তো দেশভেদে পরিবেশকে বর্ণনা করার জন্য হেমন্ত Autumn আর Fall এই তিনটে আলাদা শব্দ ব্যবহার করলে ভাল হয়। যেমন কোরিয়াতে "সকাল বেলায় ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা" দেখা যায় না। তাই এখানে Autumn কে হেমন্ত বলতে ইচ্ছা করে না। 

এখানে ঠান্ডাটা একটু ঝুপ করে পড়ে যায়। গরম থেকে হটাৎ  ঠান্ডা। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এসি বন্ধ করে হঠাৎ লেপ ঢাকা দিতে হয়। তবে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর বিষয় হল পাতাঝরা। হঠাৎ যেন প্রকৃতির মাঝে রং এর আগুন লেগে যায়। চারিদিকে সবুজ বদলে দিয়ে কেও যেন লাল হলুদ বাদামী রঙের তুলিতে লেপে দিয়ে যায়। যেদিকেই তাকাই না কেন মন উদাস হয়ে ওঠে। একটা পাগল করা আচ্ছন্নতা সারাক্ষণ ঘিরে থাকে।
  তবে সুখ যেন ক্ষণস্থায়ী। দীর্ঘ শীতঘুমে যাবার আগে একবার প্রকৃতির আবির খেলা। রংএ রংএ রাঙ্গিয়ে দেওয়া। আমি Autumn এর প্রতিটা দিন এই রঙের বর্ষায় স্নান করি। প্রকৃতিকে আত্তীকরণ করি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, একই জায়গা প্রতিদিন দেখতেও কোনো ক্লান্তি আসে না। প্রতিদিন একই জায়গায় আলাদা আলাদা রূপ। আর মনের মধ্যে একটা দুরুদুরু ভাব। এই বুঝি নিভে গেল বাতি। রং এর ছটা ধীরে ধীরে বাড়ে। একসময় সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে যেন সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটায়। সে  রূপের মায়াজালে না জড়ায় কার সাধ্য? আহা কি রূপ। সে রূপের বর্ণনা করি তার কি সাধ্য আমার।


 এরপরেই আসে সেই মন খারাপ করা সময়। ঝরতে শুরু করে পাতাগুলো। সেই লাল হলুদ বাদামী পাতায় ভরে যায় গাছের তলা। আর খালি হয় শাখা। এরপর দীর্ঘ চার পাঁচ মাস বিশ্রাম। এই পাতাঝরা কে ত্বরান্বিত করে মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টি। বৃষ্টি যে শুধুমাত্র পর্ণমোচনকে ত্বরান্বিত করে তাই নয়, বৃষ্টি বয়ে আনে ঠান্ডা। এভাবে একদিন হালকা সোয়েটার থেকে গায়ে চাপে মোটা কোট। ঠান্ডা বেড়ে চলে। গাছের সমস্ত পাতা নিঃশেষিত হয়ে যায় বাদামী কাল কান্ড আর শাখা দের রেখে। নূতন প্রাণের আশা নিয়ে।
মনের মনিকোঠায় ছাড়াও সে রং এর পরশ থেকে যায় আমাদের মুঠোফোনেও।

Saturday, November 9, 2019

খাম ও পাইন গাছটা


এই বাঁদিকে (ছবিতে উপরে) যে গাছটা দাঁড়িয়ে আছে তার নাম খাম। তার ডান দিকের(ছবিতে নিচে) গাছটা পাইন। দুটোকে আমি রোজই দেখি খেতে যাবার সময়। মনে হয় একটা ফটো তুলি। তুলব তুলব করে তোলা হয়নি অনেকদিন আজ তুললাম। 
খাম গাছটার কম্লা রঙের গোল গোল ফল।? না জানা থাকলে খাম গাছটাকে দূর থেকে কমলালেবু বলে ভুল হয়। আর পাইন গাছের ফল হয় কিনা জানিনা। তবে ফুল হয়। কিন্তু সে ফুল অন্য ফুলের মত নয়। নরম রঙিন সুগন্ধ সৌন্দর্যে ভরা। না এগুলোর কোনটাই নয়। ঠিক উল্টো। কঠিন কাল বা বাদামী। গন্ধ আছে কিনা জানিনা। কাছে গিয়ে গন্ধ নিয়ে দেখিনি। তবে দূর থেকে মন মাতানো কোন আতরের কোন ঘ্রান তো  পাইনি। 
বাঙ্গালীদের কাছে দুটো গাছই অচেনা। পাইন তবুও ছবিতে দেখেছি। দার্জিলিং বা হিমালয় বেড়াতে গেলেও দেখেছি। কিন্তু খাম পুরো ভারতবাসীর কাছে অচেনা।
 মনে আছে যখন ছোট ছিলাম বাবা হিমালয় বেড়াতে গিয়ে একটা পাইন ফুল এনেছিল।  বাবাকে আমি বারবার জিজ্ঞাসা করতাম "বাবা এটা কি?" বাবা বলতো "এটা পাইন ফুল।" আমার বিশ্বাস হতো না। জিনিসটা তো কাঠের তৈরি, তাহলে ফুল হয় কি করে? ভাবতাম বাবা-মার সাথে ইয়ার্কি করছে। বারবার জিজ্ঞাসা করেও যখন একই উত্তর পেতাম তখন প্রশ্ন করা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি দার্জিলিং গেছি, হিমালয়েও গেছি। পাইন গাছ দেখেছি, কিন্তু পাইনফুল কখনো নজর করে দেখিনি। কোরিয়া আসার পর প্রথম দেখেছিলাম। পাইনফুল দেখে বাবার কথা মনে পড়েছিল। বাবা ঠিকই বলতো, ঘরে যে কাঠের জিনিসটা রাখা ছিল সেটা একটা পাইনফুল। পাইনফুল এরকমই কাঠখোট্টা, রসকষহীন। 
 খাম গাছ আর পাইন গাছ দুটো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। কতদিন থেকে কি জানি। খাম গাছটা ফলের ভারে ঝুঁকে গেছে। এখানে সাধারণতঃ নিজের গাছ না হলে কেউ গাছ থেকে ফল পেড়ে খায় না। তাই সমস্ত ফলগুলোই রয়ে গেছে। 
এখন তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে বেশ রোদ আছে। সে রোদে আলো আছে তবে তাপ নেই। বেশ একটা আমেজ আছে। খাম আর পাইন আমেজ নিচ্ছে। কতদিন ধরে নিচ্ছে কে জানে। ঠান্ডা গরম তুষারপাত সবকিছুই সবকিছুরই আমেজ নেয় ওরা। আচ্ছা ওরা কি কথা বলে একে অপরের সাথে? জানিনা কথা বললেও কি নিয়ে কথা বলতো ওরা? আচ্ছা গাছপালা এত রঙিন হয়, কিন্তু ওদের কি সৌন্দর্যবোধ থাকে? না হলে বুঝবে কি করে কোন রংটা হলে পরিবেশটা সুন্দর দেখাবে?
 এই পাইন গাছটা কি কখনো বলে "খাম, বাঃ তোর ফলগুলো তো বেশ সুন্দর।" বা "আজ তোর পাতাগুলো কি বাহারি হয়েছে রে।" বা খাম কি কখনো নিন্দা করে পাইন গাছের? "তোর পাতাগুলো কেমন খ্যাংরা কাঠির মত, ফুলগুলো তো কালো।" ঝড়ের সময় যখন পাইন গাছের ডালগুলো খামের উপর লুটোপুটি খাচ্ছে তখন খাম গাছটা কি বলে "এই সুড়সুড়ি দিস না" তারপর খিলখিল করে হেসে ওঠে? 
জানিনা। প্রকৃতি তার আশ্চর্য খেয়ালে কী কী করে রেখেছে কে জানে। গাছের সাথে গাছের প্রেম ঝগড়া ভালোবাসাকে কি আমার সাধ্য যে বুঝি। তবু মাঝে মাঝে ব্যস্ত দিনের কাজের মাঝে রংবেরঙের গাছের দিকে চাইলে হৃদয় শীতল হয়। 

খাম আর পাইন  তোমরা চালিয়ে যাও তোমাদের আত্মীয়তা। আমায় যেতে হবে কাজে।