Thursday, November 14, 2019

পাতা ঝরার দিনগুলি

Autumn কে কি বসন্ত বলা যায়? আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতবর্ষে হেমন্তকালের যা রূপ আর ইংরেজিতে  Autumn এর রূপ এক নয়। তাই উত্তর গোলার্ধে হেমন্ত আর Autumn একসাথে আসলেও হয়তো দেশভেদে পরিবেশকে বর্ণনা করার জন্য হেমন্ত Autumn আর Fall এই তিনটে আলাদা শব্দ ব্যবহার করলে ভাল হয়। যেমন কোরিয়াতে "সকাল বেলায় ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা" দেখা যায় না। তাই এখানে Autumn কে হেমন্ত বলতে ইচ্ছা করে না। 

এখানে ঠান্ডাটা একটু ঝুপ করে পড়ে যায়। গরম থেকে হটাৎ  ঠান্ডা। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এসি বন্ধ করে হঠাৎ লেপ ঢাকা দিতে হয়। তবে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর বিষয় হল পাতাঝরা। হঠাৎ যেন প্রকৃতির মাঝে রং এর আগুন লেগে যায়। চারিদিকে সবুজ বদলে দিয়ে কেও যেন লাল হলুদ বাদামী রঙের তুলিতে লেপে দিয়ে যায়। যেদিকেই তাকাই না কেন মন উদাস হয়ে ওঠে। একটা পাগল করা আচ্ছন্নতা সারাক্ষণ ঘিরে থাকে।
  তবে সুখ যেন ক্ষণস্থায়ী। দীর্ঘ শীতঘুমে যাবার আগে একবার প্রকৃতির আবির খেলা। রংএ রংএ রাঙ্গিয়ে দেওয়া। আমি Autumn এর প্রতিটা দিন এই রঙের বর্ষায় স্নান করি। প্রকৃতিকে আত্তীকরণ করি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, একই জায়গা প্রতিদিন দেখতেও কোনো ক্লান্তি আসে না। প্রতিদিন একই জায়গায় আলাদা আলাদা রূপ। আর মনের মধ্যে একটা দুরুদুরু ভাব। এই বুঝি নিভে গেল বাতি। রং এর ছটা ধীরে ধীরে বাড়ে। একসময় সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে যেন সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটায়। সে  রূপের মায়াজালে না জড়ায় কার সাধ্য? আহা কি রূপ। সে রূপের বর্ণনা করি তার কি সাধ্য আমার।


 এরপরেই আসে সেই মন খারাপ করা সময়। ঝরতে শুরু করে পাতাগুলো। সেই লাল হলুদ বাদামী পাতায় ভরে যায় গাছের তলা। আর খালি হয় শাখা। এরপর দীর্ঘ চার পাঁচ মাস বিশ্রাম। এই পাতাঝরা কে ত্বরান্বিত করে মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টি। বৃষ্টি যে শুধুমাত্র পর্ণমোচনকে ত্বরান্বিত করে তাই নয়, বৃষ্টি বয়ে আনে ঠান্ডা। এভাবে একদিন হালকা সোয়েটার থেকে গায়ে চাপে মোটা কোট। ঠান্ডা বেড়ে চলে। গাছের সমস্ত পাতা নিঃশেষিত হয়ে যায় বাদামী কাল কান্ড আর শাখা দের রেখে। নূতন প্রাণের আশা নিয়ে।
মনের মনিকোঠায় ছাড়াও সে রং এর পরশ থেকে যায় আমাদের মুঠোফোনেও।

Saturday, November 9, 2019

খাম ও পাইন গাছটা


এই বাঁদিকে (ছবিতে উপরে) যে গাছটা দাঁড়িয়ে আছে তার নাম খাম। তার ডান দিকের(ছবিতে নিচে) গাছটা পাইন। দুটোকে আমি রোজই দেখি খেতে যাবার সময়। মনে হয় একটা ফটো তুলি। তুলব তুলব করে তোলা হয়নি অনেকদিন আজ তুললাম। 
খাম গাছটার কম্লা রঙের গোল গোল ফল।? না জানা থাকলে খাম গাছটাকে দূর থেকে কমলালেবু বলে ভুল হয়। আর পাইন গাছের ফল হয় কিনা জানিনা। তবে ফুল হয়। কিন্তু সে ফুল অন্য ফুলের মত নয়। নরম রঙিন সুগন্ধ সৌন্দর্যে ভরা। না এগুলোর কোনটাই নয়। ঠিক উল্টো। কঠিন কাল বা বাদামী। গন্ধ আছে কিনা জানিনা। কাছে গিয়ে গন্ধ নিয়ে দেখিনি। তবে দূর থেকে মন মাতানো কোন আতরের কোন ঘ্রান তো  পাইনি। 
বাঙ্গালীদের কাছে দুটো গাছই অচেনা। পাইন তবুও ছবিতে দেখেছি। দার্জিলিং বা হিমালয় বেড়াতে গেলেও দেখেছি। কিন্তু খাম পুরো ভারতবাসীর কাছে অচেনা।
 মনে আছে যখন ছোট ছিলাম বাবা হিমালয় বেড়াতে গিয়ে একটা পাইন ফুল এনেছিল।  বাবাকে আমি বারবার জিজ্ঞাসা করতাম "বাবা এটা কি?" বাবা বলতো "এটা পাইন ফুল।" আমার বিশ্বাস হতো না। জিনিসটা তো কাঠের তৈরি, তাহলে ফুল হয় কি করে? ভাবতাম বাবা-মার সাথে ইয়ার্কি করছে। বারবার জিজ্ঞাসা করেও যখন একই উত্তর পেতাম তখন প্রশ্ন করা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি দার্জিলিং গেছি, হিমালয়েও গেছি। পাইন গাছ দেখেছি, কিন্তু পাইনফুল কখনো নজর করে দেখিনি। কোরিয়া আসার পর প্রথম দেখেছিলাম। পাইনফুল দেখে বাবার কথা মনে পড়েছিল। বাবা ঠিকই বলতো, ঘরে যে কাঠের জিনিসটা রাখা ছিল সেটা একটা পাইনফুল। পাইনফুল এরকমই কাঠখোট্টা, রসকষহীন। 
 খাম গাছ আর পাইন গাছ দুটো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। কতদিন থেকে কি জানি। খাম গাছটা ফলের ভারে ঝুঁকে গেছে। এখানে সাধারণতঃ নিজের গাছ না হলে কেউ গাছ থেকে ফল পেড়ে খায় না। তাই সমস্ত ফলগুলোই রয়ে গেছে। 
এখন তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে বেশ রোদ আছে। সে রোদে আলো আছে তবে তাপ নেই। বেশ একটা আমেজ আছে। খাম আর পাইন আমেজ নিচ্ছে। কতদিন ধরে নিচ্ছে কে জানে। ঠান্ডা গরম তুষারপাত সবকিছুই সবকিছুরই আমেজ নেয় ওরা। আচ্ছা ওরা কি কথা বলে একে অপরের সাথে? জানিনা কথা বললেও কি নিয়ে কথা বলতো ওরা? আচ্ছা গাছপালা এত রঙিন হয়, কিন্তু ওদের কি সৌন্দর্যবোধ থাকে? না হলে বুঝবে কি করে কোন রংটা হলে পরিবেশটা সুন্দর দেখাবে?
 এই পাইন গাছটা কি কখনো বলে "খাম, বাঃ তোর ফলগুলো তো বেশ সুন্দর।" বা "আজ তোর পাতাগুলো কি বাহারি হয়েছে রে।" বা খাম কি কখনো নিন্দা করে পাইন গাছের? "তোর পাতাগুলো কেমন খ্যাংরা কাঠির মত, ফুলগুলো তো কালো।" ঝড়ের সময় যখন পাইন গাছের ডালগুলো খামের উপর লুটোপুটি খাচ্ছে তখন খাম গাছটা কি বলে "এই সুড়সুড়ি দিস না" তারপর খিলখিল করে হেসে ওঠে? 
জানিনা। প্রকৃতি তার আশ্চর্য খেয়ালে কী কী করে রেখেছে কে জানে। গাছের সাথে গাছের প্রেম ঝগড়া ভালোবাসাকে কি আমার সাধ্য যে বুঝি। তবু মাঝে মাঝে ব্যস্ত দিনের কাজের মাঝে রংবেরঙের গাছের দিকে চাইলে হৃদয় শীতল হয়। 

খাম আর পাইন  তোমরা চালিয়ে যাও তোমাদের আত্মীয়তা। আমায় যেতে হবে কাজে।

Monday, May 21, 2018

স্বপ্নপুরণ

স্বপ্নপুরণ

ওই যে দূরে পাহাড়ের কোলে রাজা বসে আছেন তার নাম রাজা সেজং। উনি ১৪১৮ সাল থেকে ১৪৫০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন কোরিয়াতে। অনেক ভাল কাজ করেছিলেন। যার মধ্যে সবচে উল্লেখযোগ্য হল কোরিয়ান ভাষার প্রচলন। আগে কোরিয়াতে চীনা হরফে লেখা হত। যা ছিল জটিল। তা থেকে উনি কোরিয়ান ভাষার ব্যবহার শুরু করেন যার লিখিত রূপ সাধারণ মানুষের জীবনকে নিঃসন্দেহে অনেক সহজ করে দিয়েছিল। কোরিয়ান ভাষার লিখিত রূপ এতোটাই সোজা যে ইচ্ছা থাকলে দুই ঘন্টার মধ্যে শিখে যাওয়া যায়।
এই রকম একজন মহান মানুষকে শ্রধ্যা জানাতে কোরিয়ার মানুষ তাঁরই রাজপ্রসাদের সামনে তাঁর দুটি মূর্তি স্থাপন করে। এই যায়গাটি দেশ বিদেশের অসংখ মানুষ প্রতি বছর ভ্রমন করেন। কোরিয়া বিশেষ করে সোল ঘুরেছেন অথচ সেজং রাজার প্রাসাদ অ এনার মুর্তি দেখেন নি এমন মানুষ কম আছেন। এনাকে স্মরণীয় করে তুলতে কোরিয়ান নোটেও এনার ছবি ছাপা হয়েছে।
যাই হোক অনেক মানুষের মত আমিও ভ্রমণ করেছিলাম এই যায়গাটি। প্রথম যখন এখানে আসি তখন ২০১০ সাল। এক কোরিয়ান বন্ধু আমাকে এখানে নিয়ে আসে। রাজার মূর্তি, রাজপ্রাসাদ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। পিছনে বুকখানসান পর্বতের একটি চূড়া অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে উদাত্ত্ব ভঙ্গিতে গর্বভরে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিহাস যেন এখানে থেমে আছে। তার সামনে কোরিয়ার সময়ের সাথে পা মিলিয়ে চলার সাক্ষী গগনচুম্বী অট্টালিকা। নয়ন জুড়ানো। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের এভাবে একসাথে একই স্থানে সহাবস্থানের নজির বিশ্বে খুব কম দেখা যায়।
যাই হোক, ইতিহাস ভূগোল, সমৃদ্ধি ছাড়াও যে জিনিসটা আমাকে সবচে বেশি আকর্ষণ করেছিল তা হল রাজা সেজং এর দাঁড়ানো মুর্তির পাদদেশে সজ্জিত শখানেক জলের ফোয়ারা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এগুলো চালু থাকে। এই ফোয়ারা গুলি এই যায়গার সৌন্দর্যকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সবচে বড় কথা হল এগুলির চারপাশে কোন বেড়া দেওয়া নেই। যে কেও এগুলি ছুঁয়ে দেখতে পারে। গ্রীষ্মকালে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা এখানে খেলা করে। জলে ভেজে। অনাবিল আনন্দের উৎস। প্রথম যখন দেখেছিলাম সমস্ত লজ্জা ছুঁড়ে ফেলে জলের ফোয়ারাতে খেলতে ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু সেখানে সবাই খুব কম বয়সের ছেলেমেয়ে খেলা করছিল। তাই আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গিয়েছিল। সেদিন ঠিক করেছিলাম এক দিন না এক দিন এখানে এসে আমার ছেলে বা মেয়ের সাথে এখানে খেলব। তখন আর কেও আমাকে না বলতে পারবে না।
আজ ২০১৮ সালে এসে আট বছর পর পুরণ হল আমার স্বপ্ন। একা যে স্বপ্ন স্পর্শ করা যায় না অনেক সময় পরিবার পুরণ করে সে সব। পুত্র নিয়ন প্রায় দশ মাস ছুঁই ছুঁই। এখনো দাঁড়াতে শেখে নি। আনমনে থাকলে এক দু মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। একটা কাজে গিয়েছিলাম রাজপ্রাসাদ এর কাছে। কাজের পর ভাবলাম একটু হাঁটাহাঁটি করা যাক এই দিকটা। ঠান্ডা এখনো পুরপুরি যায় নি। তবুও এখানে এসে মনটা আনচান করে উঠল ফোয়ারা দেখে। স্বপ্নের এত কাছাকাছি এসে আর অপেক্ষা সইল না। কবে গরম পড়বে আর কবে নিয়ন হাঁটতে শিখবে। সমস্ত ভুলে বাপ বেটায় চলে গেলাম ফোয়ারার মাঝে। শীতল জল স্পর্শ করলাম। যাদুবলে নিয়নও দাঁড়িয়ে পড়ল। নিয়ন জল খুব ভালবাসে। সেও আনন্দে চিৎকার করছিল। ঘরে কলে জল পড়লে সবসময় তাতে ভিজতে চায়। আজ জলের সাথে খেলল প্রাণ ভরে। স্বচ্ছ স্ফটিকের মত জল। দুলকি চালে নিয়নের উচ্চতাতেই ওঠে আর নিচে নামে। নাচ করে। বেশ কিছুক্ষণ কাটল এভাবে। প্রাণ শীতল হল। জীবন জুড়িয়ে গেল।
এই আনন্দসুন্দর মুহুর্তগুলি স্মৃতির খাতায় জমা করতে ক্রুতির উৎসাহের অভাব ছিল না। তারই কিছু ভাগ করে নিলাম সবার সাথে।
গাড়ি, বাড়ি, পেশার চিন্তার বাইরে এমন অনেক ছোট ছোট স্বপ্নই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। সাফল্যের আশ্বাস দিয়ে যায়। মনকে সবুজ রাখে। সুন্দর রাখে চারপাশ। অনাবিল আনন্দে পুর্ণ করে জীবন। একটাই আশা - এই মনে যেন চিরবসন্ত বিরাজ করে।

Wednesday, May 2, 2018

ক্লোথ ডাইপার - এক পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক শিশুকাল

এখন এমন একটা জিনিস নিয়ে কথা বলতে চলেছি যেটা খুব একটা মজাদার নয়। ডাইপার। বাচ্চাদের ডাইপার। এটার বঙ্গানুবাদ কি তা জানি না। এটা আমাদের বাংলায় উৎপত্তি নয় বলেই মনে হয়। তাই বাংলা নাম নেই। যাই হোক, ডাইপার কে ডাইপার নামেই ডাকা যাক।

যখন অামাদের ছেলে জন্মাল বিদেশ বিভুঁইএ অামরা দুজন অনভিজ্ঞ মানুষ। বাকি সব কিছু সামলে নিলেও সমস্যায় পড়লাম ছেলের মলমুত্র নিয়ে। হ্যাঁ শুনতে যত খারাপ লাগে নিজে হাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে তার চেও কঠিন। তবু সন্তান স্নেহ বলে কথা। বিনা বাক্যব্যায়ে করে যেতে লাগলাম। বাচ্চা সত্যি অপুর্ব। কিন্তু এর পেছনে যে এত করুণ কাহিনী লুকিয়ে থাকে আগে জানা ছিল না। সঠিক গুনি নি। তবে এ তো দেখি প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর পর প্যান্ট ভেজাচ্ছে। আর ভিজলেই কান্না। মানে সেটাই তার ভাষা। বলছে ভিজে গেছে। পালটে দাও। আমরা ওর জন্মের আগে থেকেই অনেক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। বেশ কয়েকটা প্যান্ট, জামা, বিছানা। মজুত ছিল। কিন্তু কোথায় কি? ছোট্ট সোনা তো আমাদের সব হিসাব ওলোট পালট করে দিল। অর্ধেক দিন যেতে না যেতেই সব শেষ। এবার কি করি?

একদিকে ঘরের কাজ প্রচুর। মানে অন্তত রান্না বান্না টা তো করতে হবে। ছেলের মা ছেলের জন্মের পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে নি। তার উপর ওকে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে হচ্ছে। আমাদের সাহায্য করার জন্য আমার মা এসেছিল। মা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেজা জামা প্যান্ট আর বিছানা কেচে শুকোতে দিয়ে দিল। কিন্তু শুকোতেও তো সময় লাগে।

বাজার থেকে কিছু ডাইপার কিনে আনলাম। জিনিসটা বেশ ভাল। আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিল।

কিন্তু দেখা দিল নুতন সমস্যা। এক তো ডাইপার এত দাম (কোরিয়াতে সব শিশুদের জিনিশই খুব দামি) যে মাসে একটা বড় টাকা এর পিছনে চলে যাবে। তার উপর ব্যবহার করা ডাইপার ফেলি কোথায়? আমরা সাধারনত ঘরের ময়লা সরকার নির্দেশিত পলিথিন এর ব্যাগে ভরে বাইরে ডাষ্টবিনে ফেলে আসি। সেক্ষেত্রে দু তিন দিনে একবার ফেললেই যথেষ্ট। সারা দিনে ছয় সাত ডাইপার রাখি কোথায়? জমা করলে ঘরে তার গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। এ তো মহা সমস্যা।
আমার পাশের ঘরে একজন আমেরিকান মহিলা থাকেন। তিনি মাঝে মাঝেই আমাদের ঘরে আসেন। ভারতীয় খাবার খান। আড্ডা মারেন। উনি আমাদের অবস্থা দেখে বললেন "আপনারা ক্লোথ ডাইপার ব্যবহার করেন না কেন?"
আমরা অবাক হলাম।।সেটা আবার কি বস্তু? তা তিনিই ব্যাখ্যা করলেন।


ক্লোথ ডাইপার হল কাপড়ের তৈরি এক রকম ডাইপার। এটা বার বার ব্যবহার করা যায়।  অনেকটা প্যান্ট এর মত দেখতে। প্যান্টের নিচের দিকে একটা পকেট মত আছে। সেখানে শোষণ করার মত নরম কাপড়ের মোটা রুমালের মত (ইংরাজিতে ইনসার্ট বলে) কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ইনসার্ট তরলকে শুষে নিতে পারে। পকেটের যে অংশ শিশুর ত্বকের সাথে লেগে থাকে সেটি নরম সছিদ্র  সুদ কাপড়ের (Suede Cloth) তৈরি হয়। এর বৈশিষ্ট হল এটি ভেতরের ইনসার্ট ভিজে গেলেও শিশুর ত্বককে ভিজে অনুভুতি হতে দেয় না। এটি শিশুর মল মুত্র থেকে দাগ লাগতেও দেয় না। বিশেষ করে শিশুর মল  এতে আটকে যায় না। ফলে শিশু পায়খানা করলেও খুব সহজে পরিস্কার করা যায়। 

ক্লোথ ডাইপারের বাইরের স্তর পলিএস্টারের তৈরি। এটি জলে ভেজে না। ফলে শিশু পেচ্ছাপ করলেও সেটি বাইরে বের হয় না। 

সরল কথায়, ক্লোথ ডাইপার সাধারণ ডাইপারের মতই কাজ করে। উপরন্তু এটি এক বার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয় না।

তা আমরা জিনিসটা কি দেখার জন্য অর্ডার দিলাম। সে এক মহা ঝঞ্ঝাট। কোরিয়াতে পাওয়া যায় না। বা খুব দাম। আমাজন ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাজন কোরিয়াতে নেই। ফলে সেই প্রতিবেশিই সহায়। আমেরিকাতে কিনে পোষ্টএর মাধ্যমে পেলাম ক্লোথ ডাইপার। 

জিনিসটা সত্যিই খুব কাজের। আমাদের সমস্যা অনেকটাই সহজ হয়ে গেল। এক একটা ডাইপার ৫-৬ মাসের শিশু পর্যন্ত ৪-৫ ঘন্টা পরিয়ে রাখা যায়। মানে সারা দিনে ৬-৭ টা ডাইপার লাগে। সারা দিন যা ভিজল তা রাতে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিলাম। রাতের জন্য ৩ তে রেখে। সকালে সেগুলো শুকনো পেয়ে গেলাম। আর রাতে যেগুলো ভিজল সেগুলো সকালে কেচে নিলাম। 

এতে আরো একটা দারুন সুবিধা আছে। শিশুর কোমর আর পায়ের মাপ অনুযায়ি ছোট বড় করা যায়। ফলে বয়সের বাড়ার সাথে সাথে নূতন কিনতে হয় না। 

আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ি ১ বছর বয়স বয়সি শিশু পর্যন্ত অনায়াসে ব্যবহার করা যায় ক্লোথ ডাইপার। 

এখন আসি দামের প্রসঙ্গে। দাম সব সময় একটা গুরুত্ত্বপুর্ণ অঙ্গ। বিশেষত মধ্যবিত্ত্য পরিবারে। ভারতের বাজারে সাধারণত সবচে কম দামি ডাইপার ৭-১০ টাকা দাম। মানে দিনে ৫ টা ব্যবহার করলেও দিনে ৩৫-৫০ টাকা খরচ। মানে মাসে ১৫০০ টাকা। ৬ মাসে ৯০০০ টাকা। এক বছরে ১৮০০০ টাকা। 

ক্লোথ ডাইপার ভারতীয় বাজারে ~৪০০ (চার শত) টাকা। ৬ টা কিনলে ২৪০০ টাকা। এগুলো প্রায় ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। মানে এক বার ~২৫০০ টাকা দিলে আর কোন খরচ নেই। সাথে আলাদা করে প্যান্ট কিনতে হয় না। ক্লোথ ডাইপার অনেক রঙে, ছাপায় পাওয়া যায়। তাই পরলে দেখতেও ভাল লাগে। আলাদা করে বিছানা কিনতে হয় না (কারণ এটা ব্যবহার করলে বিছানা ভেজে না)। শিশু ভেজা ভাব অনুভব করে না। সবচে গুরুত্ত্বপুর্ণ হল স্বাস্থ। শিশুর মল মুত্র এখানে ওখানে লেগে যায় না বা শিশু হাত দিতে পারে না। ফলে শিশুর স্বাস্থ ভাল থাকে। 

ভারতে এখন অনেক বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সরকার স্বচ্ছ ভারত অভিযান চালাচ্ছে। টয়লেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে সিনেমা তৈরি হচ্ছে। এসব দেখে আমিও একটু উৎসাহিত হয়ে অনেকগুলো ক্লোথ ডাইপার কিনে ফেললাম সরাসরি কারখানা থেকে। বাজার মুল্য থেকে একটু কম দামেই পড়েছে সেগুলো। আমার বড় ইচ্ছা ভারতে সদ্যজাত শিশু থেকে এক বছরের বাবা মা রা তাদের শিশুদের জন্য এগুলো ব্যবহার করুক। আমি পরিক্ষা মুলক ভাবে শিশুদের বাবা মা দের দিতে চাই নুন্যতম দামে। দেখাই যাক না কে কিরকম ফল পায় এগুলো থেকে। আমরা তো খুবই খুশি আমাদের বাচ্ছাকে এক সুন্দর পরিষ্কার শিশুকাল দিতে পেরে। 

কেও যদি আগ্রহি হন ক্লোথ ডাইপার কেনার জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করুন। 

Whatsaap no : +821067341985. চাইলে ফেসবুকেও মেসেজ পাঠাতে পারেন। Sandipan Bera প্রোফাইলে ক্লিক করে। 
  

Tuesday, May 1, 2018

কাটাকুটি

                                                             
             কাটাকুটি

কাঠুরেতে কাঠ কাটে, ছড়া কাটে কবি, 
সিন্ধেলেতে কাটে সিন্ধ, এটা তার হবি।
প্যাঁচে প্যাঁচে কাটে ঘুড়ি, ব্যায়ামেতে ভুঁড়ি,
নাপিতেতে কাটে চুল, করাতেতে গুঁড়ি।
বেসুরোতে তাল কাটে, আলো কাটে কালো, 
জ্ঞান পেলে কাটে ভুল, মন্দয় ভাল।
মেছুনিতে মাছ কাটে, গাঁট কাটে চোরে।
সুখ পেলে কাটে দুখ, রাত কাটে ভোরে।
 বাজারেতে মাল কাটে, বসে বসে কাল।
কাস্তেতে কাটে ধান, শ্রমিকেতে খাল। 
গুনে গুনে কাটে দিন, বিষে কাটে বিষ
ক্ষয়ে গেলে পেনসিল ছুরি কাটে শিষ।
চ্যাঁচানিতে ঘুম কাটে,  দুধ কাটে টকে 
নরুনেতে নখ কাটে, দাগ কাটে চকে।
তলোয়ার কাটে সব, বোঁটি কাটে শাক
পথ কাটে বিড়ালেতে, অপমানে নাক।

Thursday, March 8, 2018

Happy women's day !!!

It's a beautiful world around. Here everything happens on facebook. If you want to know news, weather, somebody's personal life, somebody's present position on this globe, how somebody is feeling right now just click on the blue icon on your smartphone the universe is yours.
Well, today I didn't enter here to this beautiful world to talk about facebook, but about what I found out from facebook today - women's day. Facebook is saying today is international women's day.
Looks like everybody is enjoying women's day. I think men are celebrating more than women.
Men are posting smiling pictures of their near and dear women like mom, sister, wife, girlfriend/girlfriends, ex-girlfriends, girls who are friends etc. And girls are posting their over makeup super close up selfie to show something special is happening this day.
Well, many things are happening in this world. I am not a global expert, so I shall restrict this discussion to India only.
At this moment some pregnant lady is doing her ultrasonography to know whether the tiny little heart   which is bitting in her womb belongs to a boy/girl. Even though its illegal in India to detect the gender of a new coming baby before he/she come out from mother's womb you give some money and you know what it is. In the next moment, some serious discussion will be done to decide whether the life will continue or not. If boy definitely he will continue his journey. But if girl? Well, the meeting will continue. Happy women's day!!!
At this moment some very lucky girl is taking birth in India. And at the same time, a tree is planted or some amount of gold is deposited in the bank. What a good news !!! Wait, its not to celebrate the birth. The unlucky parents have burden of her marriage just after 20-25 years. Her parents invested money as tree or gold. This grown-up tree will help her to get the cost of her marriage. To fulfill her dowry. Happy women's day.
At this moment somewhere in India family is getting ready to take the dinner. The brother is studying in his study room. The sister, the loving sister is making the dinner and dinner place ready. After all she is girl, she has to take the responsibility of feeding her brother. The same brother will take oath on the "BHAIJUJH" that he will protect his sister when she with her life protected her brother every day. But men is strong so he will protect her. And how he will protect her? Just advising her not to go out alone because somewhere there is a rapist or eve teaser.  Happy women's day !!!
At his eventful moment somewhere some girl is having her best moment in her life. She is getting married. And the priest is chanting the "mantra". There is almost no role of the girl during the marriage ceremony. Either the girl's father will say he is donating his daughter to the boy, or the boy is saying he will take care of the girl. And the girl have only one mantra to say "From today I leave my father's identity and take my husband's identity". She will move from her parent's home to husband's home. She is homeless !!! Happy women's day.
Somewhere in India at this moment two boys are quarreling with each other. One of them is coward. He is getting abused by saying "Are you wearing 'Chudi' in your hand?" Happy women's day.
Somewhere in the facebook some big celebrity and so-called progressive person like Amitav Bacchan will post in twiter that women are "our" prestigious "Property" to describe Aiswarya rai, who is more successful than him. Women are our property !!! Happy women's day !!!
Somewhere some so open-minded Yogeswar Dutt will take "only" 1 rupee dowry to show how he respects women. And nobody will say even understand that it is not the question of how much money you took as dowry it is the question did you took or not. We are so habituated with it that even we lost our sensitivity. Happy women's day !!!
As always, I am an optimistic person and I saw things are changing in India even it slow - very slow. We need a women's world not a women's day. 
Have a true women's day.       

Monday, December 11, 2017

আবছায়া

ডিসেম্বর মাস ২০১৭। সকাল ৬ঃ৫৪। তাপমাত্রা ঋণাত্মক ১২ ডিগ্রী। মানে শীতকালে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিমাঙ্ক থেকে যত উপরে থাকে এখানে ঠিক ততটাই নিচে। এটা বর্ণনা করা খুবএকটা সহজ কাজ নয়। শুধুই অনুভব করার।

 বাইরে হিমেল, থুড়ি, হিমেলতর হাওয়ার প্রবাহ অবশ্য আমার জীবনে খুব একটা বিঘ্ন ঘটাচ্ছে না। ঘরের মধ্যে ঘর গরম করার জন্য ব্যবস্থা আছে। আমাকে শুধু একটা সুইচেই চাপ দিতে হয়। সেটা থেকে যে যন্ত্র চালু হয় তা একটা পাইপলাইনের জলকে গরম করে। সেই পাইপ লাইন ঘরের মেঝের নিচে জালকাকারে বিছানো আছে। গরম জল সেই জালের মধ্য দিয়ে গেলে ঘরের মেঝে গরম হয়ে যায় আর সেই সাথে গোটা ঘর। কি অদভুত ভাবনা। কি সরল অথচ কি  কার্যকর। তা সেই গরম মেঝেতে বসে আছি। মেঝের উপর অবশ্য একটা পাতলা বিছানা পাতা। তাতে একটা উষ্ণ অনুভুতি হচ্ছে। 
       


এখনও সূর্যদয় হয় নি। জানালার স্বচ্ছ কাঁচের ওপারে রাস্তার বাতিগুলো কেমন নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে কুয়াশা নেই। জানালার কাঁচে হালকা একটা বাস্পের আস্তরণ জমেছিল যা কালক্রমে তরল জল ও বর্তমানে বরফের পাতলা  চাদরে পরিনত হয়েছে। সেই বরফের প্রলেপে রাস্তার আলো প্রতিসরণ হয়ে যখন ঘরে প্রবেশ করছে তার উজ্জ্বলতা অনেকাংশে কমে ম্লান হয়ে আসছে। একটু করুণ হয়ে। পাশের গগনচুম্বি অট্টালিকাগুলোর অনেক ঘরের আলোই জ্বলছে। জানিনা কেও ঘুম থেকে উঠে গেছে নাকি সারা রাত ঘুমোয় নি। ওদের জানালা আর আমার জানালার মৃদু অস্বচ্ছতা সেই আলোগুলোকে রাতের কালো আকাশে মিটমিট তারার মত লাগছে। রাস্তায় যান চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। বিশ্বের বড় বড় শহর রাত জাগতে পছন্দ করে। তাই সারা রাত গাড়ির কোন বিরাম নেই। রাস্তাগুলো বিশ্রাম পায় শুধুমাত্র এই ভোরের বেলায়। একটু বিশ্রাম। 


আজ ঘটনাক্রমে উঠে গেছি একটু সকাল সকাল। ভোরই বলা যায় বাইরে আলো ফোটেনি যখন। পুত্র নিয়ন ও তার মা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে মন্ত্রমুগ্ধের মত এসে বসলাম কম্পিউটারের সামনে। এই যন্ত্রটাই এখন সব। কাজ, বিনোদন। অন্তর্জালে এদিক ওদিক দিকভ্রান্ত হয়ে এসে পৌঁছালাম ব্লগে। হঠাৎ চোখে পড়ল ২০১৭ সালে কিছুই লেখা হয় নি। একটা গোটা বছর যে কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। তাই ভবলাম কিছু একটা লিখি। 

ঘরের আলো নেভানো। আধা অন্ধকারে বসে লিখছি। লিখছি বললে ভুল হবে টাইপ করছি কম্পিউটারে। কিবোর্ড়ের হালকা টুকটাক শব্দটা চারিদিকের জমাট নিঃশব্দের বুকে একটু বেমানান লাগছে। এক পেয়ালা গরম চাও বানিয়ে নিয়েছি ইতিমধ্যে। সাথে বিস্কুট। 

জানিনা এরকম সময়ই আবেগ সবসময় আমাকে কেন গ্রাস করে বসে। মন চলে যায় কোন দূর দূরান্তে। স্মৃতিরা ভিড় করে। একএকটা অস্পষ্ট ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ঠিকভাবে দেখার আগেই যেন সেটা চলে যায়। অথবা আর একটা ছবি এসে পড়ে তার উপর। মন অশান্ত হয়ে ওঠে। বিচলিত হয় না। সেই অশান্তিও কেমন স্নিগ্ধতায় ভরা। একটা অবশ অবশ ভাব। যেন নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন নেই।  হর্ষ বিষাদ মিলে মিশে একাকার। চোখ আপনা আপনি বুজে আসে।    

কতদিন সুর্যদয় দেখি নি। মনে পড়ে না শেষ কবে দেখেছি রাঙ্গা লাল সুর্য আকাশকে রাঙিয়ে দিচ্ছে। অন্ধকার কেটে একটু একটু ফর্সা হচ্ছে।  হয়ত কাক ডাকছে পাশের গাছ থেকে। মামার বাড়িতে থাকলে কোঁকোঁর কোঁক মুর্গির ডাকও শুনতে পাই। হালকা ঠান্ডায় চাদর মুড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি আমার বুডো দাদু মাটিতে চাল ছড়িয়ে দিচ্ছে মুর্গিদের খাবার জন্য। পরম যত্নে। এক পাল মুর্গি তা খাবার জন্য দৌড়ে আসছে কোঁক কোঁক করতে করতে। গোয়াল থেকে গরুর হাম্বা হাম্বা আওয়াজ। ওরাও যে জেগেছে। 

একবার সকাল সকাল গিয়েছিলাম জঙ্গলে। শাল দাঁতন বানিয়ে দাঁত মাজার জন্য। সকালের বন আমায় মুগ্ধ করেছিল। শুকনো পাতার উপর চলার মচ মচ শব্দ যেন আমার কানে ভেসে আসছে। 
পাতার কথায় মনে এল, ছোটবেলার ইসপ ফেবেলস বইএ পড়া ঘুঘু আর পিঁপড়ের গল্প। ঘুঘুর ফেলে দেওয়া পাতায় চড়ে কেমন করে পিঁপড়ে ফিরে এসেছিল নদীর পাড়ে। এরকম ভাবে জলের উপর ঘোরার সখ ছিল অনেক দিনের।  

একবার আমাদের গ্রামের পুকুরে একটা ভেলা বানানো হয়েছিল বাঁশ আর খড দিয়ে। মাছ ধরার জন্য। তা জেলেরা সেটা ব্যবহার করার পর পাড়ে বেঁধে রেখে চলে যায়। আমি দেখছিলাম সবকিছু আগাগোড়া আড়াল থেকে। জেলেরা চলে যেতেই আমার কৌতুহলি মন জেগে উঠল। আমি উঠে পড়লাম সেই ভেলায় আর দড়ি দিলাম খুলে। কিছুটা যেতে না যেতেই শুকনো খড় ভিজতে শুরু করল। আর ডুবতে শুরু করল ভেলা। এদিকে আমি সাঁতার জানি না। ভাগ্যিস তখন একজন এসেছিল পুকুরঘাটে। উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিল ঘরে। আর ছোটবেলার সবসময়ের পুরস্কার বিনা পয়সায় বকুনির অভাব ঘটে নি। 

একবার এমনি ভাবেই আমি বসে ছিলাম পুকুরের পাড়ে বহুক্ষণ। বেশ কয়েক ঘন্টা। একটা কাঁকড়ার খোঁজে। এক বন্ধু আমাকে গল্প শুনিয়েছিল সে নাকি কাঁকড়ার পায়ে দড়ি বেঁধে খেলার ধানক্ষেত চাষ করেছিল কাঁকড়ার দাঁড়া দিয়ে। আমারও মনে হয়েছিল আমারও একটা কাঁকড়া চাই। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কাঁকড়া কোথায় পেলি? সে বলেছিল পুকুরের পাড়ে বসেছিলাম। একটা কাঁকড়া জল থেকে উঠে এল। আমি গিয়ে ধরে ফেললাম। আমিও অপেক্ষা করেছিলাম পুকুরপাড়ে জলের ধারে। ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে ছিলাম জলের দিকে। অধির আগ্রহে। কোন কাঁকড়া উঠে আসে নি। 

বসে থাকার আর একটা কাহিনী মনে আসছে। তখন ছোট ছিলাম। অনেক ছোট। সবে হয়ত গুনতে শিখেছি। ঘরের দেওয়াল ঘড়িটা দেখিয়ে বাড়িতে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এটা কি? কাকু বলেছিল এটা দিয়ে সময় মাপা যায়। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কি ভাবে? কাকু বলেছিল এই যে বড় কাঁটাটা আছে সেটা এক পাক ঘুরলে এক ঘন্টা হয়। কাকু আমাকে ছোট ভেবে সেদিনের ক্লাস ওখানেই শেষ করেছিল। আমি ভেবেছিলাম আমি জেনে গেছি সময় কি আর ঘড়ি কি ভাবে দেখে। সেদিন দুপুরে বাড়ির সবাই অলস আড্ডায় ব্যস্ত ছিল। কেও একটা আনমনে জিজ্ঞাসা করেছিল কটা বাজে? হঠাৎ আমি বলে উঠেছিলাম আমি দেখে আসছি কটা বাজে। আমার জ্ঞান এটুকুই যে বড় কাঁটাটা একবার ঘুরলে এক ঘন্টা হয়। সেদিন আমি ঘড়ির সামনে একঘন্টা বসেছিলাম। উত্তপ্ত দুপুরে কেও খেয়াল করে নি আমি কত ঘামছি। এক ঘন্টা পর যখন আমি ফিরে এসেছিলাম কেও আমাকে জিজ্ঞাসা করে নি কটা বাজে। আমি মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে আমি ঘড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। ঘরের সবাই তো অবাক। এতক্ষন কি করছিলাম। যাই হোক শেষে জিজ্ঞাসা করেছিল কটা বাজে। আমার উত্তর ছিল এক ঘন্টা হয়ে গেছে। সেদিন না বুঝলেও পরে বুঝেছিলাম কেন তখন ঘরে হাসির রোল উঠেছিল।
 
দুপুর মানেই তা শেষ হয়ে আসবে বিকেল। আর বিকেল মানেই খেলা। খেলার মাঠে যে কি কি ঘটেছিল সেই ছবি একটার পর একটা এসেই চলেছে। অজস্র। অফুরন্ত। ছেলেবেলাটাই যে কেটেছে খেলার মাঠে। কখনও ভাবি নি বিকেল বেলাও ঘরের ভেতর কাটানো যায়। সেই বর্ষার বিকেলে কাদামাঠে ফুটবল খেলা আর একবার খেলতে চাই। সেই সারা বিকেল এদিক সেদিক সাইকেল নিয়ে ঘোরা আর একবার ঘুরতে চাই। ঘড়িকে পিছনে ঘুরিয়ে যেতে চাই সেই বিকেলে যেদিন বন্ধুদের সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে চলে গিয়েছিলাম অনেক দূর ঘর থেকে। লুকোবার জন্য। কিন্তু লুকোবার জায়গা পাই নি। বন্ধুরা খুঁজে না পেয়ে আমাকে ছাড়াই শুরু করেছিল খেলা। সন্ধ্যা হতে সবাই ফিরে গিয়েছিল ঘরে। আমি ছাড়া। অজানা জায়গায় সন্ধ্যা হওয়ায় রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম। অন্য গ্রামের কোন অজানা লোক সাইকেলে করে আমায় ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ঘরে। ঘরের বকুনি তো উপরি পাওনা। 

সেদিন ভাবি নি আজ কুড়ি তিরিশ বছর পর কোন এক ঠান্ডা সকালে দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে সেই দিনের ঘটনা চোখে জল আনবে। হারিয়ে যেতে চাই আবার সেদিনের মত। জানি আজ আর কেও সাইকেলে করে আমায় ফিরিয়ে দিয়ে যাবে না ঘরে। সাইকেলের হয়ত অভাব নেই এখনও কিন্তু ঘরের বড় অভাব। ছোট থেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা ঘুরতে ঘুরতে যেমন দুনিয়াকে ঘর করে নিয়েছি তেমনি হারিয়েছি নিজের ঠিকানা। ঘর বলতে আর কোন জায়গার ছবি হঠাৎ মাথায় আসে না। একটা ঘর চাই। 

বাইরে ধীরে ধীরে আলো ফুটছে। লাল হচ্ছে আকাশ। পাশের পাহাড়ের মাথার উপর তার আভা এসে পড়েছে। কি সুন্দর।  স্বপ্ন দেখছি কি? কেন বার বার মনে হচ্ছে কবে কোথাও ঘটেছে এই ঘটনা। মনটা কেন শিশু হয়ে উঠছে আজ? 

রাস্তায় একটা গাড়ির হর্নের বিকট আওয়াজ নিঃশব্দ খান খান করে দিল।  

সব সুন্দরই কোন অসুন্দরকে ঢাকার চাদর। সুন্দরের ঠিক নিচে থাকে একটা কঠোর বাস্তব। যেমন ওই ঢেও  খেলান অপরূপ পাহাড়ের নিচেই আছে কঠিন পাথর, ওই লাল সুর্যের ভেতর আছে গনগনে আগুন।  

ফিরে এলাম বাস্তবে। সিওল। ১২ই ডিসেম্বর। বাইরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ১৫ ডিগ্রী নিচে। 

পুত্র নিয়ন হাত পা নাড়তে শুরু করেছে। খেলতে হবে ওর সাথে। দেখি ছেলেবেলা আবার শুরু করতে পারি কি না।